সায়ীর নিয়ম
(সাফা – মারওয়া পাহাড়ে দৌঁড়)
প্রতি হজ্জ ও প্রতি ওমরায় সায়ী করা ওয়াজিব। শুধু নফল তাওয়াফে সায়ী নাই।
অতএব, ওমরা বা হজ্জের তাওয়াফের পর সায়ী করতে হলে তাওয়াফের পর হারাম শরীফের দক্ষিণ পূর্ব দিকে সবুজবাতির পাশ দিয়ে সাফা পাহাড়ে যেতে হবে।
তাওয়াফের সায়ীতে যাওয়ার আগে আবার হাজারে আসওয়াদে ইস্তিলাম অর্থাৎ চুমা দিয়ে যেতে হবে। যাওয়ার সময় ইজতেবা থাকলে তা খুলে পূর্ণভাবে ইহরামের চাদর গায়ে দিতে হবে।
সায়ীর নিয়ত শুরুর আগে সাফা পাহাড়ে উঠার সময় কোরআনের এই আয়াতটি বারবার পড়তে থাকুন। এই আয়াতটি মুখস্ত করে নিন। কেননা সায়ীর সময় প্রতি চক্করে সাফা ও মারওয়ায় উঠার সময় এই আয়াতটি বারবার পড়তে পাড়লে উত্তম।
اِنَّ الصَّفَا وَ الۡمَرۡوَۃَ مِنۡ شَعَآئِرِ اللّٰہِ ۚ فَمَنۡ حَجَّ الۡبَیۡتَ اَوِ اعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡہِ اَنۡ یَّطَّوَّفَ بِہِمَا ؕ وَ مَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا ۙ فَاِنَّ اللّٰہَ شَاکِرٌ عَلِیۡمٌ
উচ্চারণ: ইন্নাচ্ছফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আভিতামারা ফালা জুনাহা আলাইহি আইয়াত্তয়্যাফা বিহিমা। ওয়ামান তাতওয়াআ’খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকিরুন আ’লিম।
অর্থ: সাফা ও মারওয়া আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন। যে ব্যক্তি হজ্জ ও উমরাহ করবে তার জন্য এ দুটোকে প্রদক্ষিণ করা কোন দোষ নয় (বরং পূণ্য) কেউ স্বেচ্ছায় ভাল কাজ করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ পুরষ্কার দাতা, সর্বজ্ঞ।
সায়ীর নিয়ত
সাফা পাহাড়ের উপর ১০/১২ হাত উঠে আল্লাহর ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে সায়ীর নিয়ত করবেন।
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اُرِيْدُ اَنْ اَسْعٰى مَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ سَبْعَةَ اَشْوَاطٍ لِّوَجْهِكَ الْكَرِيْمِ فَيَسِّرْهُ لِيْ وَتَقَبَّلْهُ مِنِّيْ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু আন আসআ’মাবাইনাছ ছফা ওয়াল মারওয়াতা সাবআ’তা আশওয়াতিল লিওয়াজহিকাল কারীমি ফায়াচ্ছিরহুলী ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে সাফা ও মারওয়ার মধ্যে ৭বার সায়ী করার নিয়ত করছি। সুতরাং ইহা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং আমার থেকে তা কবুল করে নাও।
এখন কাবার দিকে মুখ করে দুই হাত কাবার দিকে উপরে তুলে জোরে জোরে তাকবীর দিতে হবে:
اَللّٰهُ اَكْبَرُ اَللّٰهُ اَكْبَرُ اَللّٰهُ اَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
অর্থ: আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা।
তারপর নিচের দোয়াটি ৩ বার পড়ুন
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهٗ لاَ شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْـحَمْدُ يُحْىِ وَ يُمِيْتُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহয়ী ওয়াইউমীতু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহ্ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সকল রাজত্ব ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য। তিনি জীবন-মুত্যু দান করেন, সকল কল্যাণ তাঁরই হাতে। তিনি সর্বশক্তিমান।
এই সাফা পাহাড় দোয়া কবুল হওয়ার একটি স্থান। এই দোয়া পড়ে মোনাজাতের মত দুই হাত উঠিয়ে অনেকক্ষণ পর্যন্ত কাকুতি মিনতি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
এরপর সাফা পাহাড় হতে নেমে মারওয়া পাহাড়ের দিকে স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। সাফা পাহাড় দক্ষিণ দিকে মারওয়া পাহাড় উত্তর দিকে। সাফা ও মারওয়ার পুরা পথকে মাসআ’ বলে। সায়ীর পুরা পথটাই দোয়া কবুলের জায়গা।
সবুজ বাতির এলাকা
সাফা পাহাড় থেকে নেমে কিছু উত্তর দিকে মারওয়া অভিমুখে চললে সবুজ বাতির এলাকার ৫/৬ হাত আগে থাকতেই কিছু বেগে দৌড়াতে শুরু করবেন এবং পুরা সবুজ বাতির অংশটি (৪০ গজ) ৭ বারই দৌঁড়িয়ে যেতে হবে। এই সবুজ বাতীর অংশটুকু শুধু পুরুষগণ দৌড়ে যাবেন আর মহিলাগণ স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাবেন।
এই সবুজ বাতির পুরা পথকে ‘মিলাইনে আখজারাইন’ বলে। এই পথটি দোয়া কবুল হবার একটি স্থান। এই স্থানে মনে-মুখে যত ইচ্ছা হয় আল্লাহর কাছে চাইবেন।
তারপর যখন মারওয়া পাহাড়ের কাছে যাবেন তখন সাফার মতই মারওয়ার উপর উঠবেন। এখানেও সাফার উপর আরোহণ করে যেভাবে দোয়া ও তকবির বলার কথা লিখা হয়েছে তাই করবেন এবং ইহাও দোয়া কবুলের একটি স্থান। সাফা মারওয়ায় যে সাতবার চক্কর দিতে হয়, এই এক চক্কর হল অর্থাৎ সাফা হতে মারওয়া পর্যন্ত আসলে এক চক্কর হল অর্থাৎ এখন মারওয়া হতে সাফা পর্যন্ত গেলে আর এক চক্কর হবে। প্রত্যেক বারই পাহাড়ের উপর উঠে এরূপ দোয়া করবেন। দৌঁড়াবার সময় এদিক ওদিক তাকাবেননা। সপ্তম চক্কর শেষ হবে মারওয়ার উপরে গিয়ে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আপনার জানামতে যে কোন দোয়া পড়তে পারেন। তবে অনেকে ইচ্ছা করলে সায়ীর সাত চক্করের সাতবার সায়ীর জন্য নিচের সংক্ষিপ্ত দোয়াটি প্রতিবার পড়তে পারেন। আর দরূদ শরীফ ও নিজের মনের দোয়া করতে পারেন।
সায়ীর সংক্ষিপ্ত দোয়া
اَللّٰهُمَّ اِنَّكَ قُلْتَ اُدْعُوْنِىْ اَسْتَجِبْ لَكُمْ وَاِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ وَاِنِّىْ اَسْئَلُكَ كَمَا هَدَيْتَنِىْ لِلْاِسْلَامِ اَنْ لَّا تُنْزِعَهُ مِنِّىْ حَتّٰىَ تَتَوَفَّانِىْ وَاَنَا مُسْلِمٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা কুলতা উদ্উ’নী আস্তাযিব্ লাকুম ওয়া ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীআ’দা ওয়া ইন্নী আস্আলুকা কামা হাদায়তানী লিল্ ইসলামি আললা তুনযিআ’হু মিন্নী হাত্তা তাতাওয়াফ্ফানী ওয়া আনা মুসলিম।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি বলেছ যে, আমাকে ডাক আমি জবাব দিব এবং তুমি ওয়াদা খেলাফ কর না আর নিশ্চয় আমি তোমার কাছে ভিক্ষা চাই, যেহেতু তুমি আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছ, যে তুমি তা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে না এ পর্যন্ত যে তুমি আমাকে মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুগ্রস্ত করবে।
সবুজ বাতির অংশের দোয়া
সায়ী করার সময় প্রতি চক্করেই সবুজ বাতির অংশে দৌড়ানোর সময়ে নিচের দোয়াটি অবশ্যই পড়বেন-
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَاَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ
উচ্চারণ: রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আআযযুল আকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, তুমিই সর্বাপক্ষো অধিক ক্ষমতাশালী এবং সর্বাপেক্ষা অধিক সম্মানী। তুমি আমাকে দয়া কর এবং ক্ষমা করে দাও।
এই বিষয়ের ভিডিওর লিংক – https://www.youtube.com/watch?v=r6GaAoA_uI4&t=443s